ইফতারির দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মারামারি, আহত ৫'
বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় :
১৩-০৩-২০২৪ ১১:৪৬:২৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৩-০৩-২০২৪ ১১:৪৬:২৭ পূর্বাহ্ন
ফাইল ছবি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্রী হলের সীমানা দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৫ জন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। বিভিন্ন হল থেকে স্ট্যাম্প, ব্যাট, সাইকেলের চেইন, লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে নেতা-কর্মীদের ঘটনাস্থলে দেখা গেছে।
বাকৃবি হেলথ কেয়ারের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সাদিকুল ইসলাম খান বলেন, 'আহতদের মধ্যে একজনের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে, একজনের কাঁধের জয়েন্টে এক্সরে করতে শহরে পাঠানো হয়েছে। আর বাকি সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।'
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগ এবং শেখ রোজী জামাল হল শাখা ছাত্রলীগ যথাক্রমে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান ও সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদের অনুসারী। বেশ কিছুদিন ধরেই দুই হলের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ঝামেলা চলছিল।
মঙ্গলবার সীমানা নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে দুই হলের প্রভোস্ট, হল ছাত্রলীগের নেতা, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আলোচনা হয়। এর মধ্যেই হলের সীমানায় ইফতারির দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ওই দুই হলের ছাত্রী নেতৃবৃন্দের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হলেও কথা-কাটাকাটি চলতে থাকে।
একপর্যায়ে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের এক নেতা সভাপতি গ্রুপের একজনকে ছাত্রী হলের ভেতরেই মারধর করে। পরে তাদের হলের বাইরে বের করে আনা হয়। এ সময় উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। পরে হল থেকে ছাত্ররা গিয়ে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের আরেকজনকে মারধর করে। তখন দুই গ্রুপেরই নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে রোকেয়া হলের সামনে ভিড় জমায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে রোকেয়া হলের সামনে থেকে দুই গ্রুপের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
কিছুক্ষণ পর আবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে দুই গ্রুপ। এ সময় সভাপতি গ্রুপের সদস্যরা আব্দুল জব্বার মোড়ে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা চলে গেলে স্ট্যাম্প, ব্যাট, সাইকেলের চেইন, লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ইফতারের আগ পর্যন্ত দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় চলতে থাকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। তবে ইফতারের পরে আর কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
বাকৃবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান বলেন, 'নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'
বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াদ বলেন, 'একটি হল যখন তৈরি করা হয় তখন তার নির্দিষ্ট নকশা থাকে। না থাকলেও সেটি নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় সেটি আমরা সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু নিজেদের ভুল বুঝাবুঝির কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে অনেক চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।'
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের মতো পরিবেশ তখন ছিল না।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো আজহারুল ইসলাম বলেন, 'ছাত্রীদের দুই হলের সীমানা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আমরা হলের ভেতর থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সব হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। আমরা কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহায়তায় সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।'
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রক্টর বলেন, 'আমি তো একা আইন তৈরি করি না। এই মুহূর্তে তদন্ত কমিটি হবে কিনা, বলতে পারছি না।'
সংঘর্ষের বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, 'ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাটি শুনেছি। প্রক্টর এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে নিয়মানুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin
কমেন্ট বক্স